বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সীমান্তের ওপারে দিনভর ব্যাপক সংঘর্ষ: পালিয়ে এপারে ঢুকেছে ৫৮ বিজিপি সদস্য

রিকন বড়ুয়া:

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেকুবুনিয়া ক্যাম্পে ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি ও মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর মধ্যে এ সংঘর্ষ হচ্ছে। শনিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বোমাবর্ষণ চলছে। ওপারের সীমান্ত জনপদ পরিনত হয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে।

সীমান্তের ওপারে চলমান সংঘর্ষে এ পারে পালিয়ে এসেছে অন্তত ৫৮ জন মিয়ানমার বর্ডার র্গাড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য। এরমধ্যে অনেকে আহতবস্থায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আসার খবর সীমান্তরক্ষী বিজিবি সহ দায়িত্বশীল কোন সংস্থা স্বীকার করেনি।স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে ওপারে ঘুমধুম, তুমব্রু ও ঢেকুবুনিয়া বিজিপি’র ক্যাম্পগুলো দখলে নিয়েছে আরকান আর্মি।দখল হওয়া ক্যাম্পগুলো উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা করছে বিজিপি।

মিয়ানমারের সংঘাতের গুলি, মর্টার শেল এসে পড়েছে সীমান্তের এপারেও। এতে পাঁচ বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, পুঁড়েছে বসত ঘর। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সীমান্তবর্তী পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা। সব মিলে চরম আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

এদিকে সীমান্তের ওপার থেকে বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তুমব্রু কোনার পাড়া, মাঝের পাড়া ও বাজার পাড়ায়। আতঙ্কে ঘর ছেড়েছে এই ৩ গ্রামের মানুষ। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ৫ জন। কোনার পাড়ার কয়েকটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে আহতরা হলেন, কোনার পাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর (৫০), রহমা বেগম (৪০), টিটু (৩০) এবং আমির হোসেনের ছেলে শামশুল আলম, আর একজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্রোহী গ্রুপের ব্যাপক গুলাগুলির কারণে টিকতে না পেরে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপির ৩০ জনের মতো সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে বিজিবি ক্যাম্পে। সীমান্তপথে আরো ৩০ জনেরও বেশি বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অবস্থান নিয়েছে বলে সীমান্তের স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

শনিবার রাত ৩টা থেকে ব্যাপক গুলি বর্ষণের পাশাপাশি, মর্টার শেল নিক্ষেপ ও জান্তা বাহিনী যুদ্ধ হেলিকপ্টার থেকে বোমা মারছে। রবিবার দুপুর ১২ টার দিকে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর একটি সামরিক হেলিকপ্টার সীমান্তের ওপারে চক্র দিতে দেখা যায়। হেলিকপ্টার থেকে বিদ্রোহীদের লক্ষ করে গুলি, মর্টার শেল ও বোমা বর্ষণ করা হয়। পাল্টা জবাবে বিদ্রোহী গোষ্ঠী (আরকান আর্মির) সদস্যরা ভারি ভারি অস্ত্র ব্যবহার করেন।

একইদিন সন্ধ্যার দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান থেকে পেলা হয় বোমা। এতে সীমান্তের বাজার ঘাট বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের চতুর্পাশে বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি ঘিরে রেখেছে এবং বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি দখলে নিয়েছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিজিপির কিছু সদস্য তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে লাগুয়া স্কুলগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড-বিজিবিও নিরাপত্তা বাড়িয়েছে সীমান্তে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।

মিয়ানমারের সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে সেদেশের জান্তা সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষের জের ধরে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তেও উত্তেজনা চলছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের তুমব্রু ক্যাম্পটি।

এদিকে বর্তমানে সীমান্তজুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজমান। সীমান্তজুড়ে চলছে আতঙ্ক। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে। এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত হেলিকপ্টার ও সামারিক বিমান থেকে গোলা ও বোমা বর্ষণ চলছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দীল মোহাম্মদ জানান, ৩ গ্রামের হাজারো মানুষ গত রাত থেকে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। গরু, ছাগল, হাস, মুরগী ওই অবস্থায় রেখে ঘরবাড়ি ছেড়েছে সবাই। মালামাল নেওয়ারও সুযোগ হয়নি।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION